ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়াসহ তিন উপজেলার ১৮ পদ দায়িত্ব পালন!

মনির আহমদ, কক্সবাজার :: চকরিয়া উপজেলার গুরুত্বপুর্ণ একটি দপ্তর উপজেলা খাদ্য দপ্তর। এ দপ্তরের উপজেলা কর্মকর্তার পদবী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বা কর্মকর্তা। মাঠ পর্যায়ে খাদ্য ব্যবস্থাপনার সার্বিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য দেশের প্রশাসনিক বিভাগের সাথে সঙ্গতি রেখে সারা দেশকে ৮টি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে। অঞ্চল তথা বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অধীনে জেলাসমূহের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকগণ। প্রতি উপজেলায় ১ জন করে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিয়োজিত আছেন। দেশজুড়ে মোট ৫টি সাইলো, ১৩টি সিএসডি এবং ৬৩১টি এলএসডি আছে। এসকল খাদ্য গুদামের বর্তমান কার্যকরী ধারণ ক্ষমতা প্রায় ১৯.৫০ লক্ষ মে: টন। সারা দেশের কৌশলগত স্থানে সাইলো, সিএসডি এবং দেশের প্রায় সকল জেলা-উপজেলায় কমপক্ষে ১টি এলএসডি, গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় দুই বা ততোধিক এলএসডি’র মাধ্যমে খাদ্য ব্যবস্থাপনার প্রশাসনিক ও অপারেশনাল কার্যাবলি সম্পাদন করা হয়।

মৌসুমে ধান কেনা ওএমএস, ফেয়ার প্রাইস, খাদ্যশস্য সংগ্রহ, লাইসেন্স প্রদান/নবায়ন (আটাচাক্কি ও খাদ্যশস্যের খুচরা ব্যবসায়ীকে), ডিও ইস্যুকরণ, ভি-ইনভয়েস জারীর মাধ্যমে এক কেন্দ্র থেকে অন্য কেন্দ্রে খাদ্যশস্য প্রেরণ। বিভিন্ন চ্যানেলে বিতরণ/ সরবরাহকৃত খাদ্যশস্যের দৈনিক হিসাব , সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ। সংগ্রহের ক্ষেত্রে খাদ্যশস্যের মুল্য বাবদ পরিশোধিত এবং বিতরণের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত টাকার হিসাব সাপ্তহিক ভিত্তিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ। বোঝাই/খালাস নির্দেশ (এলইউএ) জারী, নগদ জমা ভাউচার পুরণ ও অনুমোদন, সাপ্তাহিক নগদ জমা ভাউচার সারসংক্ষেপ প্রনয়ন। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা ইত্যাদি।

কাজগুলো সম্পাদনের জন্য প্রতি উপজেলা দপ্তরে রয়েছে একজন করে কর্মকর্তা, হিসাব কাম মুদ্রাক্ষরিক, পরিদর্শক, উপপরিদর্শক, পিয়ন, দারোয়ান সহ ৬ টি রাজস্ব পদ। কিন্তু সব মিলিয়ে চকরিয়া খাদ্য দপ্তরে রয়েছে একজন খাদ্য কর্মকর্তা একজন মাষ্টার রোলের নৈশ প্রহরী। একই খাদ্য কর্মকর্তা আবার অতিরিক্ত দ্বায়িত্বে রয়েছেন আরো দুই উপজেলা

পেকুয়া ও কুতুবদিয়া। সম্প্রতি চকরিয়া উপজেলা খাদ্য অফিসে গিয়ে দেখা যায় চকরিয়া উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা/নিয়ন্ত্রক তপন মল্লিক একাই কর্মকর্তা অফিসের কম্পিউটারে কাজ সামলাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাঁর ব্যস্ততার হেতু জানতে চাইলে তিনি জানান, চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার তিন দপ্তরের ১৮ পদে দ্বায়িত্ব পালন করছেন তিনি একাই। নিজেই কেরানী, পিয়ন দারোয়ান। তাই চকরিয়া অফিসের কাজ সেরে তাঁকে যেতে হবে পেকুয়া ও কুতুবদিয়া।

এভাবেই চকরিয়া পেকুয়া ও কুতুবদিয়া তিনটি উপজেলার খাদ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী হয়ে তিন কার্যালয় চালাচ্ছেন তিনি।

জানাযায়, খাদ্য অধিদপ্তর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত একমাত্র সংস্থা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতিতে অবিভক্ত বাংলায় উদ্ভূত ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ (এৎবধঃ ঋধসরহব) মোকাবেলায় বর্তমানের খাদ্য অধিদপ্তর ঐ সময়ে সিভিল সাপ্লাই বিভাগ নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত হলে খাদ্য ও বেসামরিক সরবরাহ (ঋড়ড়ফ ্ ঈরারষ ঝঁঢ়ঢ়ষু উবঢ়ঃ.) বিভাগ নামে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যাত্রা শুরু করে। ১৯৫৭ সালে খাদ্য বিভাগের স্থায়ী কাঠামো প্রদান করা হলেও প্রশাসন, সংগ্রহ, সরবরাহ, বন্টন ও রেশনিং, চলাচল ও সংরক্ষণ, পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ, হিসাব ও অর্থ ইত্যাদি পরিদপ্তর পৃথকভাবে কার্য সম্পাদন অব্যাহত রাখে। ১৯৮৪ সালে প্রশাসনিক সংস্কার কার্যক্রমের ফলে ৬টি পরিদপ্তর একীভূত হয়ে পুনর্গঠিত খাদ্য অধিদপ্তর (উরৎবপঃড়ৎধঃব এবহবৎধষ ড়ভ ঋড়ড়ফ) প্রতিষ্ঠা লাভ করে। নববইয়ের দশকের শেষভাগে প্রশিক্ষণ নামে নতুন একটি বিভাগ খাদ্য অধিদপ্তরে সংযোজিত হয়।

মহাপরিচালক খাদ্য অধিদপ্তরের প্রধান নির্বাহী হিসেবে সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন। একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক অপারেশনাল কর্মকান্ডে মহাপরিচালককে সার্বিক সহায়তা প্রদান করেন। মহাপরিচালকের বিভিন্নমুখী কর্মকান্ডের জন্য অধিদপ্তরের ৭টি বিভাগে ৭ জন পরিচালক নিয়োজিত আছেন। খাদ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ পরিচালকবৃন্দের অধীনে অর্পিত নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পাদন করেন।

একজন নিয়ন্ত্রক তিন উপজেলার ১৮ পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী হয়ে কার্যালয় চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানিয়ে চকরিয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তপন মল্লিক আক্ষেপ করে জানান, একজনে কতক্ষন পারি বলুনতো? একজন নাটগার্ডের সহযোগীতা নিয়ে অফিস চালাতে হচ্ছে। পারলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করে লিখুন। কর্মচারী শুন্য অফিসে হ-য-ব-র-ল অবস্থা চলছে।

 

 

পাঠকের মতামত: